প্রকৃত বন্ধুর যেসব গুণাবলী থাকা উচিত
প্রকৃত বন্ধুর যেসব গুণাবলী থাকা উচিত!
বিখ্যাত সমাজসেবক হেলেন কেলারের কথা মনে আছে? যিনি বলেছিলেন, ‘‘একাকী আলোয় হাঁটার চেয়ে একজন বন্ধুর সাথে অন্ধকারে হাঁটা উত্তম।’’
আর জনপ্রিয় গায়ক অঞ্জন দত্তের সেই গানটির কথা-
“বন্ধুত্বের হয় না পদবী
বন্ধু তুমি কেঁদো না
বন্ধু সবুজ চিরদিন
বন্ধুত্বের বয়স বাড়ে না।
হয়তো তোমার বারান্দায়
থাকবেনা আমার জামা
তবুও মনের জানালায় অবাধ আনাগোনা
বন্ধু তোমার আমি তাই, অন্য দাবি রেখো না।।’’
সব নিয়ম অনিয়ম, বিশ্বাস, নির্ভরত আর বাধভাঙ্গা সম্পর্কের মিলনস্থল হচ্ছে বন্ধু। যে কথা কাউকে বলা যায় না, তার আগল অকপটে খুলে দেয়া যায় বন্ধুর সামনে। বন্ধু কখনো শিক্ষক, কখনো সকল দুষ্টুমির একমাত্র সঙ্গী। মনের বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস, আবেগ আর ছেলেমানুষী হুল্লোড়ের অপর নামই তো বন্ধুত্ব। চলার পথে যে সম্পর্কে থাকেনা জাতিভেদ, যে সম্পর্ক থাকে সব বাঁধনের ঊর্ধ্বে। সেই তো বন্ধু। অর্থ দিয়ে কেনা যায় না বন্ধুত্ব, কিংবা গায়ের জোরেও হয় না বন্ধুত্ব। বন্ধুত্বের জন্য চাই শুধু গুণ। আসুন জেনে নিই একজন ভালো বন্ধুর কিছু গুণাবলি।
প্রতি মুহূর্তের স্বতঃস্ফুর্ততা:
দু’জন মানুষকে পাশাপাশি রেখে বন্ধু হতে বললে বন্ধুত্ব হয় না। প্রেমের মতোই বন্ধুত্বও সাবলীল এবং স্বতঃস্ফুর্ত। ফলে প্রিয় বন্ধুরা কখনওই একসঙ্গে চুপচাপ থাকে না। তারা প্রাণবন্ত এবং উচ্ছল থাকে। যদি কথাই বলতে ইচ্ছা না করে তাহলে সেই বন্ধুত্ব না করাই ভালো। জোর করে অন্তত বন্ধুত্ব হয় না ৷
বন্ধুত্ব চিরকালের
প্রিয় বন্ধু চিরদিনের। হতে পারে দু’জনে আলাদা কলেজ গিয়েছেন, আলাদা শহরে জীবন-যাপন করেন, প্রাত্যহিক জীবনের নানা কর্মকান্ডে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, কিন্তু এত কিছুর পরও ভালো বন্ধুত্ব কখনোই হারিয়ে যায় না। দুজন ভালো বন্ধু কখনোই একে অপরকে ভুলে যাবে না, বরং আরো বেশি করে একে অপরকে মনে করবে এবং সময় পেলেই একে অপরের সঙ্গে দেখা করে খুনসুটি করবে, এমনই হতে হবে বন্ধুত্ব। রাগ অভিমান করে পরস্পরকে ভুলে গেলে সেটা কখনোই প্রকৃত বন্ধুত্ব নয়। যেকোনো উপায়ে একে অপরের সাথে যুক্ত থাকা এবং মনের ভাব আদান-প্রদান করার চেষ্টার মধ্য দিয়ে বন্ধুত্বকে জিইয়ে রাখতে হয়।
বন্ধুত্বে বিশ্বস্ত থাকা:
কথায় আছে বিশ্বাস ভালোবাসার শক্তি। আর বন্ধুত্বে বিশ্বাস রক্ষা করা খুবই জরুরি। তৃতীয় কোনো পক্ষের কথার সূত্র ধরে বন্ধুত্বের বিশ্বাসভঙ্গ কখনোই কাম্য নয়। প্রকৃত বন্ধুকে এ বিষয়টি সবসময় মাথায় রাখতে হয়, তবেই তো প্রকৃত বন্ধুত্ব হয়।
দুঃসময়ে পাশে থাকা:
এক বন্ধুর বিপদে চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই অন্য বন্ধুর সাড়া দেওয়াই হচ্ছে প্রকৃত বন্ধুত্বের পরিচয়। প্রয়োজনে সময়ে অসময়ে বন্ধুর বিপদে তাকে সাহায্য করা। যে বন্ধুর জন্য আপনি এমন করতে পারবেন এবং যে বন্ধু আপনার পাশে সর্বদা থাকতে পারবে, সে-ই আপনার সত্যিকার বন্ধু।
বন্ধুত্বের ইচ্ছেকে সম্মান জানানো:
বন্ধুর ইচ্ছাকে সবসময় সম্মান জানানো উচিত। যদি তা পছন্দ না হয়, তবে সরাসরি বলুন। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকা অবশ্যই জরুরি। সমালোচনা করুন, তবে কটুক্তি নয়। তবে সমালোচনার ভাষা ব্যবহারে সচেতন হওয়ায় খুবই প্রয়োজন। একবার ভুল হলে তাকে ছুঁড়ে না ফেলে তা শুধরে নেওয়াই প্রকৃত বন্ধুর দায়িত্ব। বন্ধুর প্রতি বিনয়ী হওয়া বন্ধুত্বের প্রধান হাতিয়ার।
বন্ধুর প্রকৃত শুভাকাঙ্ক্ষি হওয়া:
ভালো বন্ধু সবসময় বন্ধুর ভালো চায়। নিজের ভালো হোক সকলেই চায়, তবে তার জন্য বন্ধুর ক্ষতি হোক এমন ভাবা কিন্তু প্রকৃত বন্ধুর পরিচায়ক নয়। প্রকৃত বন্ধু চাইবেন তার নিজের উন্নতির পাশাপাশি আপনারও উন্নতি হোক। যেখানে কিংবা যত দূরেই থাকুন না কেন, বন্ধুর কল্যাণ কামনাই প্রিয় বন্ধুর পরিচায়ক
বন্ধুত্বে সৎ থাকা:
বন্ধুত্বে অবশ্যই সৎ থাকতে হবে। মিথ্যা তথ্য কিংবা ধারণা দিয়ে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়া যায়, কিন্তু গড়লেও তা কখনোই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। আপনি যা সেটাই প্রকাশ করা এবং অযথা কৃত্রিমতা বর্জন করে নিজের ব্যক্তিত্বকে প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে বন্ধুর কাছে স্বচ্ছ ধারণা তুলে ধরাই হচ্ছে প্রকৃত বন্ধুর দায়িত্ব। মনের মতো বন্ধু পেতে সততার কোনো বিকল্প নেই। সততা প্রিজারভেটিভ ছাড়াই সম্পর্কের বৃক্ষকে সতেজ রাখে।
বন্ধুকে সময় দেওয়া:
দীর্ঘদিনের বন্ধুরা একে অন্যের পেছনে সময় ব্যয় করে। মানুষের পারিপার্শ্বিক অবস্থা প্রতিনিয়ত সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। বন্ধুরা হয়তো আগের মতো সময় দিতে পারে না। এর ফলে যে দুই বন্ধুর মধ্যে সম্পর্কের ব্যাঘাত ঘটবে তা কিন্তু না। নতুন বন্ধুদের পাশাপাশি পুরোনো সম্পর্কগুলোকে ঝালাই করে নিতে হয় প্রতিনিয়ত। দৈনন্দিন ব্যস্ততায় পুরোনো বন্ধুত্বকে হারিয়ে ফেলা একদমই উচিত নয়। আপনার বন্ধু আর আপনার মাঝখানে কেবল এক মুঠোফোন দূরত্ব। বন্ধুকে মনে করুন, পুরোনো স্মৃতি রোমন্থন করুন।
ভালো শ্রোতা হওয়া:
বন্ধুত্বে ভালো শ্রোতা হওয়াও খুব জরুরি। বন্ধুর সাথে আড্ডায় কেবল নিজের কথাগুলোকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত নয়। বন্ধুকেও কথা বলতে দেওয়া এবং আলোচনায় উৎসাহিত করার মধ্য দিয়ে দুজনের ভালো লাগা, মন্দ লাগা পরষ্পরের বুঝে নিতে সহজ হয়। বন্ধুর সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া, বন্ধুর কাছে গুরুত্বপূর্ণ এমন বিষয় নিয়ে উপহাস না করাই প্রকৃত বন্ধুর দায়িত্ব। বন্ধু মানেই কেবল আমার সবটুকু কথা তাকে বলে ফেলা নয়, বরং তার কথাগুলোকেও আপন করে নেওয়া।
বন্ধুত্বকে টিকিয়ে রাখতে শেখা:
বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখা অনেক কঠিন কাজ। তবে একজন প্রকৃত বন্ধু সব সময়ই সম্পর্ককে প্রাধান্য দেন। তবে অনেকেই জানে না যে বন্ধুত্ব কিভাবে টিকিয়ে রাখতে হয়। ফলে কারণে-অকারণে নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়, দূরত্ব তৈরি হয়, বন্ধুত্ব ক্রমেই হারিয়ে যায়। বিপরীতে যারা দীর্ঘদিন বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখতে চান তাদের থাকতে হবে স্বাভাবিকতা আর প্রাণ চাঞ্চল্য। বন্ধুত্বের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি, রাগ, অনুরাগ, ব্যস্ততা, এড়িয়ে চলা, নার্ভাস ভাব ইত্যাদি দূরে রাখা শিখতে হয়।
No comments
Thanks for Comment